শেষ বিকেলের আলো ১ম পর্ব Shesh Bikeler Alo । হেদায়েতের গল্প

 

শেষ বিকেলের আলো ১ম পর্ব Shesh Bikeler Alo । হেদায়েতের গল্প


গল্প: শেষ বিকেলের আলো

১ম পর্ব

লেখা: Nilofa Nilo(উম্মে জাবির)  হেদায়েতের গল্প। 

নিজে ডাক্তার হয়ে সমবয়সী এক ডিভোর্সি বা তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেও সহজ ছিলো না!

পরিবারের বিরুদ্ধে, সমাজের বিরুদ্ধে এমনকি একপর্যায়ে এসে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সুমুকে বিয়ে করেছিলাম।

সুমাইয়া আমার চাচাতো বোন।  আমরা সহপাঠী এবং খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। এইরকম বন্ধুত্বে বেশিরভাগই প্রেম হয়ে যায়, অল্পবয়সী প্রেম!!

সুমু আর আমি একে অপরকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অবশ্য এটাকে কখনো ভালোবাসা বলা যাবে না, ভালোবাসার চেয়ে অল্পবয়সী আবেগই বেশী ছিলো। এইরকম ছেলে মেয়ে একসাথে পড়ার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমবয়সী প্রেমের সম্পর্ক ঘড়ে উঠে, যার শেষ পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারে না।

আমরা একই বাড়ির, একই ক্লাসের  হওয়াতে আমাদের তেমনভাবে কেউ সন্দেহ করেনি। সে খুব দুর্দান্ত, চঞ্চল, হাসিখুশি স্বভাবের। মিষ্টি করে হেসে দিলে প্রাণটা ভরে যেতো। সুমুর কিছু অদ্ভুদ বৈশিষ্ট্য ছিলো, হঠাৎ করেই বলতো,

--ইয়াসির চল্, জ্যোৎস্না দেখতে যাই।

 সুমু ঐসময় জ্যোৎস্না খুব পছন্দ করতো।

বৃষ্টির দিনে হুট করে ঘরে এসে বলতো,

--আরে কত পড়বি,  চল্ বৃষ্টি বিলাস করি।

ওর এই হুটহাট আবদার গুলো বেশ লাগতো। 

ওর মায়াবী চোখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হতো।

খুব বেশি ফর্সা সে ছিলো না, কিন্তু অসম্ভব মায়াবী ছিলো। ওর জন্য আমাদের ক্লাসের, উপরের ক্লাসের সব ছেলেরাই পাগল ছিলো। কিন্তু সে ছিলো আমার জন্য পাগল।

ভাবতেই নিজেকে হিরো হিরো মনে হতো!

জীবিনানন্দ দাসের বনলতা সেন, এই যেনো আমারই বনলতা।

আমার ভালোবাসা!!

ঝর্ণার মতো চঞ্চল ছিলো সে!! সুমুর নূপুরের শব্দ আমাকে পাগল করে দিতো।

প্রেম কী জিনিস বুঝার আগেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।

ক্লাস টেন থেকেই আমাদের মধ্যে প্রেম শুরু হলেও, কলেজে উঠে একে অপরের বেশি ক্লোজ হওয়ার আগেই, একে অপরকে বেশি সময় দিতে পারার আগেই আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি দ্বীনের পথে ফিরে আসি। 

আল্লাহর পক্ষ থেকে অমূল্য উপহার হেদায়তের বাণি পেয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।

যখন থেকেই দ্বীনকে পরিপূর্ণ মানতে শুরু করেছি, বিয়ের আগে প্রেম গুনাহ, বিয়ের আগে গায়রে মহরাম নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ানো গুনাহ জেনেছি; ঠিক তখন থেকেই সুমুকে এড়িয়ে চলতে শুরু করি। খুব কষ্ট হতো, খুব।

আমি গ্রামের পাশের কলেজে ভর্তি হই, আর সে মহিলা কলেজে।

এক সপ্তাহ ওর কাছ থেকে দূরে থাকলে, পরের সপ্তাহে আবার ওর সাথে একাকী দেখা করেছি, কথা বলেছি। নিজের নফসের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছিলাম। কখনো জয়ী হয়েছি, কখনো নফসকে দমন করতে পারিনি। ওর চোখের জল আমাকে বারাবার দুর্বল করে দিচ্ছিলো। নিজের কষ্টের চেয়ে সুমুর কষ্ট সহ্য করা আমার জন্য খুব বেশি কষ্টের ছিলো।

সে প্রতিনিয়ত আমাকে ভুল বুঝে যাচ্ছিলো, বারবার মেসেজ দিতো,

"কলেজে গিয়ে আমার চেয়ে সুন্দরী নতুন কাউকে পেয়েছিস, না? তাই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস, আমার সাথে দেখা করিস না। তোর নতুন সঙ্গীকে নিয়ে ভালো থাকিস"

ওর এসব মেসেজ আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত।

আমি নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করলেও, ওর মেসেজ পেয়ে পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলাম। 

আমি ওকে কীভাবে বুঝায়, ওর সাথে এভাবে মিশা সম্ভব নয়। মিশতে পারি না। হ্যা আমিও সুমাইয়াকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, কিন্তু আমার পক্ষে যেহেতু এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়, এমনকি বিয়ের চিন্তা করাও সম্ভব নয় সুতরাং ওকে আমার এড়িয়ে চলাটাকেই উত্তম মনে করলাম। 

একদিন মেসেজ দিলো,

" ইয়াসির তুই কী আমার সাথে দেখা করবি? নয়তো আমি বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাবো"

কিছুদিন আগে থেকেই সুমু মেসেজ দিয়ে যাচ্ছিলো, ওর বিয়ের কথা চলতেছে। 

যদি আমি ওর সাথে সম্পর্ক রাখি যে কোন ভাবেই সে বিয়ে আটকে দিবে। কিন্তু যদি না রাখি হয়তো সুমু বিয়েতে রাজী হয়ে যাবে, নয়তো নিজেকে শেষ করে দিবে!!

রাজি হলে তো, বিয়ে হয়ে যাবে ; সমস্যা নেই। কিছুদিন পর একে অপরকে ভুলে যাবো। 

কিন্তু যদি খারাপ কিছু করে ফেলে!! আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।

আমি ওর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিই।

সেদিন দুপুরে কলেজের পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখি, সে বসে আছে। পিছনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। চুলগুলো এতই এলোমেলো, মনে হচ্ছে কতদিন চিরুনি লাগানো হয়নি। 

ওকে সুমাইয়া বলে ডাক দিতেই পিছনে ফিরে থাকালো। এক চোখ অভিমান চোখে, মেয়েটা কান্না করছিলো, বললো,

-- অহ এবার নামটাও ভুলে গেছিস? আগে সুমু ডাকতিস আর এখন,,,,

আমি চুপ করে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আবার সেই বলা শুরু করলো,

--কাকে পেয়েছিস কলেজে? বল না? তোমার জীবনে কে এসেছে? তার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই। 

ইয়াসির কীভাবে ভুলে গেলে আমাদের সেই ওয়াদা, সেই স্বপ্ন।

কেন ভুলে গেলে?

বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

লক্ষ্য করলাম, সুমু আগে আমাকে তুই বললেও এখন তুমি করে বলতে শুরু করেছে। 

 সেই মুহুর্তে নিজেকে ধরে রাখা খুব কষ্ট হচ্ছিলো।

কিন্তু আমি জানি, আজ যদি আমি নিজেকে স্ট্রং রাখতে না পারি, তবে আর কখনো পারবো না। নিজের নফসকে আর জয়ী হতে দিতে পারি না।

বললাম,

--বিয়েতে রাজী হয়ে যাও।

: আমাদের স্বপ্নের কী হবে?

আমি একটা চিঠি লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। চিঠিটা ওর হাতে দিয়ে বললাম, 

" বাড়িতে চলে যাও, বাড়িতে গিয়ে পড়িও"

সুমু,

আমি তোমাকে যখন ভালোবেসেছি, তখন আমি ইসলাম সম্পর্কে, আল্লাহর হুকুম - আহকাম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। এমনকি এটাও জানতাম না। কোন মেয়ের সাথে এভাবে একাকী নির্জনে দেখা করা যাবে না। কারণ সেখানে তৃতীয় জন শয়তান থাকে। আমার জীবনে অন্য কোন মেয়ে আসেনি। কিন্তু বিয়ের আগে তোমাকেও আমার মনে জায়গা দিতে পারব না। হুম আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি, আমাদের জন্য এটাই মঙল হবে, যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করে ফেলা, সেটা সম্ভব নয়। আমার বড় আরো দুই ভাই বোন পড়ালেখা করতেছে। 

আর একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়া। নিজেদের দূরে রাখাটাই আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য মঙলের হবে।

দয়া করে আমাকে হেল্প করো, আমি যেন তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারি। 

সম্ভব হলে তুমিও দ্বীনকে বুঝার চেষ্টা করো। আশা করি আমাকে ভুল বুঝবে না।

দেখবে নিজেকে আরো কত ভালোভাবে জানতে পারবে।

নয়তো আমার মতই আল্লাহর কাছে দোয়া কর, আমি আল্লাহকে বলি,

"হে আল্লাহ সুমাইয়া যদি আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ভালো হয়, তবে ওকে আমার করে দিও। যদি ভালো না হয় তবে ওকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দাও।"

ভালো থেকো।

ইতি

ইয়ায়াসির

দূরে সরিয়ে দাও কথাটা বলতে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু আল্লাহর ফায়সালাই আমার জন্য উত্তম হবে। সাথেসাথে একটু ভয়ও পেতে লাগলাম, সুমু খুব যিদ্দি,  কী না কি করে বসে। 

 In shaa Allah 

চলবে,,,

Previous Post
Next Post

post written by:

No comments: